*****অধরা স্বপ্নগুলো *****
"ছেলেটা কথা দিয়েছিলো বিয়ের পর অফিস থেকে আসার সময় প্রতিদিন মেয়েটার জন্য বেলি ফুলের মালা নিয়ে আসবে ... বেলি ফুল মেয়েটার খুব প্রিয় !!
.
মেয়েটা বলেছিলো, সে আর কখনো চুল ছোট করবে না ... লম্বা চুলে খোপা করবে ... সেই খোপাতে অফিস ফেরত ছেলেটা যখন ফুলের মালা গুঁজে দিবে, মেয়েটা খুব ব্যস্ততার ভান করে রান্না ঘরে যেতে যেতে বলবেঃ "অ্যাই !!
.
ছাড়ো তো ... চুলায় তরকারি পুড়ে যাচ্ছে !!"
.
তরকারির পোড়া গন্ধ আর বেলি ফুলের ঘ্রাণ যখন মিলেমিশে একাকার হয়ে যাবে ঘরটা জুড়ে, ছেলেটা আর মেয়েটা তখন শক্ত করে একজন আরেক জন কে ধরে রাখবে !!
.
মেয়েটা ঠিক করে রেখেছিলো তাদের একটা ফুটফুটে কন্যা সন্তান হলে তার নাম কি রাখবে ... কাগজে লিখে রেখেছিলো, সপ্তাহের কোন দিন কে মশারি টানাবে আর কে মশারি গুজবে !!
.
বসন্তের কোন এক বিকেলে কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে বসে শক্ত করে হাতটা ধরে তারা ঠিক করেছিলো, জোছনা রাতে তাদের বিয়ে হবে ... চোখ বুজে ছেলেটা ভাবতোঃ বিয়ের রাতে জানালা দিয়ে চাঁদের আলো যখন মুখে এসে পড়বে, লাল টুকটুকে শাড়িতে মেয়েটাকে তখন পরীর মত লাগবে !!
... ... ...
জোছনা রাতেই মেয়েটার বিয়ে হয়েছিলো ... "৫ ফুট ১০ ইঞ্চি, নিজের বাড়ি আছে, অমুক ভার্সিটি থেকে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট, হ্যান্ডসাম, অমুক কোম্পানির সিইও, হাই ফাই ফ্যামিলি" - নামক কয়েকটা শব্দের সাথে মেয়েটার বিয়ে হয়েছিলো ... বাবা-মা এর পছন্দ !!
.
মেয়েটা এখন বেঁচে আছে ... হয়তো ভালোই আছে ... শুধু তরকারি রান্নার সময় যখন কলিং বেল বেজে ওঠে, নিজের অজান্তেই কেঁপে ওঠে মেয়েটা ... লম্বা চুলে খোপা করার সময় তার হাত কাঁপতে থাকে শুধু ...
রাস্তার পাশে কৃষ্ণচূড়া গাছ দেখলে তার চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসে কেন জানি ... বেলি ফুল তার সহ্য হয় না এখন ... একদমই সহ্য হয় না!!
.
ছেলেটা এখন কোথায় আছে, কেমন আছে - কেউ জানে না ... হয়তো ভালোই আছে ... শুধু বসন্তের বিকেলে তার বুকের ভেতরটায় খুব যন্ত্রণা হয় ... শুধু জোছনা রাতে তার চোখে অমাবস্যা থাকে ... ঘোর অমাবস্যা থাকে !! "সব তোর ভালোর জন্যই" - কথাটাকে বিশ্বাস করে বাবা-মা এর কথায় রাজি হয়ে গিয়েছিলো মেয়েটা ... সব ভালো সবসময় সহ্য হয় না ... তথাকথিত "ভালো" এর জন্য অসহ্য কষ্ট বুকে পুষে বেঁচে থাকাটা অসম্ভব না ... মানুষ ঠিকই বেঁচে থাকে ... মরে যায় শুধু স্বপ্নগুলো !!"
0 comments:
Post a Comment